কম্পিউটার (Computer): যা বর্তমান সময়ে বহুল ব্যবহৃত ও দৈনন্দিন জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ন একটি যন্ত্র। বর্তমান যুগ ইনফরমেশন ও টেকনোলোজি নির্ভর হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বেড়েই চলেছে।
কম্পিউটার (Computer) শব্দটি গ্রিক “কম্পিউট” (Compute) শব্দ থেকে এসেছে। Compute শব্দের অর্থ হিসাব বা গণনা করা। আর কম্পিউটার (computer) শব্দের অর্থ গণনাকারী যন্ত্র। কিন্তু এখন আর কম্পিউটারকে শুধু গণনাকারী যন্ত্র বলা যায় না। কম্পিউটার এমন একটি যন্ত্র যা তথ্য গ্রহণ করে এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তা বিশ্লেষণ ও উপস্থাপন করে। সভ্যতার বিকাশ এবং বর্তমানে তার দ্রুত অগ্রগতির মূলে রয়েছে গণিত ও কম্পিউটারের প্রবল প্রভাব।
কম্পিউটারের ইতিহাস: যুগে যুগে গণনার কাজে বিভিন্ন কৌশল ও যন্ত্র ব্যবহার করে থাকলেও অ্যাবাকাস (Abacus) নামক একটি প্রাচীন গণনা যন্ত্রকেই কম্পিউটারের ইতিহাসে প্রথম যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়। এটি আবিষ্কৃত হয় খ্রিষ্টপূর্ব ২৪০০ সালে ব্যাবিলনে। ১৬৪২ সালে ১৯ বছর বয়স্ক ফরাসি বিজ্ঞানী ব্লেইজ প্যাসকেল সর্বপ্রথম যান্ত্ৰিক ক্যালকুলেটর আবিষ্কার করেন। তিনি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ারের সাহায্যে যোগ বিয়োগ করার পদ্ধতি চালু করেন। উনিশ শতকের শুরুর দিকে আধুনিক একটি যন্ত্রের নির্মাণ ও ব্যবহারের ধারণা প্রথম প্রকাশ করেন চার্লস ব্যাবেজ । তিনি এটির নাম দেন ডিফারেন্স ইঞ্জিন (Difference Engine)। ১৮৩৩ সালে এই ডিফারেন্স ইঞ্জিন নিয়ে কাজ করার সময় তিনি অ্যানালাইটিক্যাল ইঞ্জিন নামে আরও উন্নত ও সর্বজনীন একটি যন্ত্রের ধারণা দেন। ভাই চার্লস ব্যাবেজ কে কম্পিউটরের জনক বলা হয়। যদিও তিনি প্রয়োজনীয় যন্ত্র ও অর্থের অভাবে কোনোটির কাজই শেষ করতে পারেননি।
কম্পিউটার বিজ্ঞানের সত্যিকার সূচনা হয় অ্যালান টুরিং এর প্রথমে তাত্ত্বিক ও পরে ব্যবহারিক গবেষণার মাধ্যমে। বিশ শতকের মধ্যভাগ থেকে আধুনিক কম্পিউটারের বিকাশ ঘটতে শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টেল কর্পোরেশন ১৯৭১ সালে মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করার পর থেকে বাজারে আসতে শুরু করে মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক কম্পিউটার। তখন থেকে কম্পিউটারের আকৃতি ও কার্যক্ষমতায় এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। ১৯৮১ সালে বাজারে আসে আই.বি.এস কোম্পানির পার্সোনাল কম্পিউটার (Personal Computer) বা পিসি (PC)। এর পর উদ্ভাবিত হতে থাকে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাইক্রোপ্রসেসর এবং তৈরি হতে থাকে শক্তিশালী পিসি । আই.বি.এম কোম্পানি প্রথম থেকেই আই.বি.এম কম্পোর্টেবল কম্পিউটার (IBM compatible computer) তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা-নিষেধ না রাখায় এ ধরনের কম্পিউটারগুলির মূল্য ব্যাপক হারে হ্রাস পায় এবং এর ব্যবহারও ক্রমাগত বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশে কম্পিউটার ব্যবহারের সুচনা হয় ষাটের দশকে। পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্র, ঢাকা-তে ১৯৬৪ সালে স্থাপিত হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) প্রথম কম্পিউটার। এটি ছিল আই.বি.এম (International Business Machines IBM) কোম্পানির ১৯৬২ সিরিজের একটি মেইনফ্রেম (Mainframe Computer) কম্পিউটার । যন্ত্রটির প্রধান ব্যবহার ছিল জটিল পবেষণা কাজে গাণিতিক হিসাব সম্পন্নকরণ। নববই-এর দশকে কম্পিউটার এর ব্যবহার ব্যাপকতা লাভকরে। দর্শকের মধ্যভাগ থেকে এ দেশেতথ্য প্রযুক্তি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে।
কম্পিউটারের জনক: কম্পিউটার তৈরির প্রথম ধারণা দেন বিজ্ঞানী চার্লস ব্যাবেজ। ১৮৩৩ সালে সর্বপ্রথম এ্যানালটিক্যাল ইঞ্জিন (Analytical Engine) নামে একটি যান্ত্রিক Computer তৈরীর পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং ইঞ্জিনের নকশা তৈরী করেন। পরবর্তীকালে তাঁর তৈরি নকশা ও কম্পিউটারের ওপর ভিত্তি করেই আজকের আধুনিক কম্পিউটার তৈরি করা হয়। তার এই এ্যানালটিক্যাল ইঞ্জিনের পরিকল্পনায় আধুনিক কম্পিউটারের ধারণা ছিল বলেই চার্লস ব্যাবেজকে কম্পিউটারের জনক বলা হয়।
অন্যদিকে, জন ভন নিউম্যানকে আধুনিক কম্পিউটারের জনক বলা হয়। তিনি একজন হাঙ্গোরীয় বংশোদ্ভুত মার্কিন গণিতবিদ। নিউম্যান কোয়ান্টাম বলবিদ্যায় অপারেটর তত্ত্বব্যবহারের অগ্রদূত। তিনি সেটতত্ত্ব, জ্যামিতি, প্রবাহী গতিবিদ্যা, অর্থনীতি, যোগাশ্রয়ীপ্রোগ্রামিং, কম্পিউটার বিজ্ঞান, পরিসংখ্যান সহ আরো অনেক ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন। পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম হচ্ছে ENIAC (Electronic Numerical Integrator and Com - puter)। এটিই প্রথম প্রোগ্রাম নিয়ে কাজকরার ডিজিটাল কম্পিউটার। এর পর থেকেই মূলত কম্পিউটার প্রজন্ম শুরু হয়।
কম্পিউটার সাধারণত দুইটি মাধ্যমের সমন্বয়ে কাজ সম্পাদন করে থাকে। নিচে উদাহরণ সহকারে আলোচনা করা হলো।
প্রথমত-হার্ডওয়্যার: কম্পিউটারের বাহ্যিক আকৃতিসম্পন্ন সকল ভৌত যন্ত্র, যন্ত্রাংশ ও ডিভাইস সমূহকে হার্ডওয়্যার বলে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার আবার তিনভাগে ভাগ করা যায়।
ক) ইনপুট যন্ত্রপাতি: কী-বোর্ড, মাউস, ডিস্ক, স্ক্যানার, কার্ড রিডার, ডিজিটাল ক্যামেরা ইত্যাদি।
খ) সিস্টেম ইউনিট: হার্ড ডিস্ক, মাদারবোর্ড, এজিপি কার্ড, র্যাম ইত্যাদি।
গ) আউটপুট যন্ত্রপাতি: মনিটর, প্রিন্টার, ডিস্ক, স্পিকার, প্রোজেক্টর, হেড ফোন ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত-সফটওয়্যার: সমস্যা সমাধান বা কার্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে কম্পিউটারের ভাষায় ধারাবাহিকভাবে সাজানো নির্দেশমালাকে প্রোগ্রাম বলে। প্রোগ্রাম বা প্রোগ্রাম সমষ্টি যা কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও ব্যবহারকারীর মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে হার্ডওয়্যার কার্যক্ষম করে তাকেই সফটওয়্যার বলে। কম্পিউটারের সফটওয়্যারকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) সিস্টেম সফটওয়্যার : সিস্টেম সফটওয়্যার কম্পিউটারের বিভিন্ন ইউনিটের মধ্যে কাজের সমন্বয় রক্ষা করে ব্যবহারিক প্রোগ্রাম নির্বাহের জন্য কম্পিউটারের সামর্থ্যকে সার্থকভাবে নিয়োজিত রাখে।
খ) অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার : ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান বা ডেটা প্রক্রিয়াকরণের জন্য ব্যবহৃত প্রোগ্রামকে অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার বলে। ব্যবহারিক সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক রকম তৈরি প্রোগ্রাম বাণিজ্যিক পণ্য হিসেবে পাওয়া যায়, যাকে সাধারণত প্যাকেজ প্রোগ্রামও বলা হয়। সুতরাং একটি কম্পিউটার হল হার্ডওয়্যারও সফটওয়্যার এর যৌথ সমন্বয়।
কম্পিউটার সিস্টেম হলো কতগুলো ইন্টিগ্রেটেড উপাদানের সম্মিলিত প্রয়াস যা কিছু সাধারণ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কাজ করে। কম্পিউটার সিস্টেমের উপাদানগুলোতে রয়েছে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ছাড়াও, হিউম্যানওয়্যার বা ব্যবহারকারী, ডেটা বা ইনফরমেশন, অপারেটিং সিস্টেম।
হিউম্যানওয়্যার বা ব্যবহারকারী:
ডেটা সংগ্রহ, প্রোগ্রাম বা ডেটা সংরক্ষণ ও পরীক্ষাকরণ, কম্পিউটার চালানো তথা প্রোগ্রাম লিখা, সিস্টেমগুলো ডিজাইন ও রেকর্ড লিপিবদ্ধকরণ এবং সংরক্ষণ, সফট্ওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের মধ্যে সমন্বয় সাধন ইত্যাদি কাজগুলোর সাথে যুক্ত সকল মানুষকে একত্রে হিউম্যানওয়্যার (Humanware) বলা হয়।
ভেটা বা ইনফরমেশন:
ইনফরমেশন বা তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক কে ডেটা বলে। ডেটা হল সাজানো নয় এমন কিছু বিশৃঙ্খল ফ্যাক্ট (Raw Fact) ডেটা প্রধানত দুই রকম -
(ক) নিউমেরিক (Numeric) ডেটা বা সংখ্যাবাচক ডেটা। যেমনঃ ২৫,১০০,৪৫৬ ইত্যাদি।
(খ) অ-নিউমেরিক (Non-Numeric) ভেটা। যেমন: মানুষ, দেশ, জাতি ইত্যাদির নাম, জীবিকা, কিংবা ছবি, শব্দ ও তারিখ প্রভৃতি।
অপারেটিং সিস্টেম:
অপারেটিং সিস্টেম হচ্ছে এমন একটি সফটওয়্যার যা কম্পিউটার প্রোগ্রামের এক্সিকিউশনকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং যা সিডিউলিং, ডিবাগিং, ইনপুট/আউটপুট কন্ট্রোল, একাউন্টিং, কম্পাইলেশন, স্টোরেজ অ্যাসাইনমেন্ট, ডেটা ম্যানেজমেন্ট এবং আনুষঙ্গিক কাজ করে থাকে। বর্তমানে মাইক্রো কম্পিউটার বা পিসিতে বহুল ব্যবহৃত অপারেটিং সিস্টেমগুলো হলো - ডস, উইন্ডোজ ৯৫, উইন্ডোজ ৯৮, উইন্ডোজ ২০০০, ইউনিক্স, উবুন্টু, মিন্ট ডেবিযান, ফেডোরা, ম্যাক ওএসএক্স, উইন্ডোজ এক্সপি, উইন্ডোজ ভিস্তা, উইন্ডোজ ৭, উইন্ডোজ ৮, উইন্ডোজ ৮.১, উইন্ডোজ ১০, উইন্ডোজ ১১, লিনাক্স ইত্যাদি।
কম্পিউটারের রয়েছে প্রচুর ব্যবহার। মানুষ তার কাজের উন্নয়নের জন্য কম্পিউটারকে কাজে লাগায়। তাই দিন দিন কম্পিউটারের ব্যবহার বেড়েই চলছে। নিচে কম্পিউটারের বিভিন্ন ধরণের ব্যবহার তুলে ধরা হল-
১. অফিস ব্যাবস্থাপনা ২. শিক্ষা ক্ষেত্রে ৩. শিল্প ক্ষেত্রে ৪. চিকিৎসা ক্ষেত্রে ৫. কৃষি ক্ষেত্রে ৬. গবেষণায ৭. সামরিক ক্ষেত্রে ৮. তথ্য পরিসংখ্যানে ৯. মুদ্রণ শিল্পে ১০. মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি
| ১১. ডিজাইনে ১২. প্রোগামিং ১৩. যোগাযোগ ব্যবস্থায় ১৪. ব্যাংকিং জগতে ১৫. সংস্কৃতি ও বিনোদনে ১৬. আদালত ১৭. অর্থবাজারে ১৮. আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ১৯. ভূগোলে- GISও GPS প্রযুক্তি ২০. মানচিত্র অংকনে
|
কম্পিউটারের গঠন ও প্রচলন নীতির ভিত্তিতে একে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
১. এনালগ কম্পিউটার
২. ডিজিটাল কম্পিউটার
৩. হাইব্রিড কম্পিউটার
আকার, সামর্থ্য, দাম ও ব্যবহারের গুরুত্বের ভিত্তিতে ডিজিটাল কম্পিউটারকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায় ।
১. মাইক্রোকম্পিউটার
২. মিনি কম্পিউটার
৩. মেইনফ্রেম কম্পিউটার
৪. সুপার কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটারগুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. ডেস্কটপ
২. ল্যাপটপ
নিচে কম্পিউটারের পূর্ণাঙ্গ শ্রেণীবিভাগ দেখানো হলো:
এনালগ কম্পিউটার
যে কম্পিউটার একটি রাশিকে অপর একটি রাশির সাপেক্ষে পরিমাপ করতে পারে,তাই এনালগ কম্পিউটার বলে। এটি উষ্ণতা বা অন্যান্য পরিমাপ যা, নিয়মিত পরিবর্তিন হয় তা রেকর্ড করতে পারে। মোটর গাড়ির বেগ নির্ণায়ক যন্ত্র এনালগ কম্পিউটারের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
ডিজিটাল কম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটার দুই ধরনের বৈদ্যুতিক ভোল্টেজ দ্বারা সকল কিছু প্রকাশ করাতে পারে। ভোল্টেজের উপস্থিতিকে ১ এবং অনুপস্থিতিকে ০ দ্বারা প্রকাশ করা হয়,এটি যে কোন গণিতের যোগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারে এবং বিয়োগ,গুণ ও ভাগের মতো অন্যান্য অপারেশন সম্পাদন করে। আধুনিক সকল কম্পিউটার ডিজিটাল কম্পিউটার।
হাইব্রিড কম্পিউটার
হাইব্রিড কম্পিউটার হলো এমন একটি কম্পিউটার যা এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের সর্বোত্তম বৈশিষ্ট্যগুলোর সমন্বয়ে গঠিত। এটি বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ব্যবহার করা হয়। সুতরাং বলা যায়, প্রযুক্তি ও ভিত্তিগত দিক থেকে এনালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটারের আংশিক সমন্বয়ই হচ্ছে হাইব্রিড কম্পিউটার। সাধারণত হাইব্রিড কম্পিউটারে তথ্য সংগ্রহ করা হয় অ্যানালগ পদ্ধতিতে এবং গণনা করা হয় ডিজিটাল পদ্ধতিতে। যেমন আবহাওয়া দপ্তরে ব্যবহৃত হাইব্রিড কম্পিউটার এনালগ পদ্ধতিতে বায়ুচাপ,তাপ ইত্যাদি পরিমাপ করে ডিজিটাল পদ্ধতিতে গণনা করে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।
মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মেইনফ্রেম কম্পিউটার (কথ্য ভাষায় "বড় কম্পিউটার”) গুলি প্রধানত গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় অ্যাপ্লিকেশনের জন্য ব্যবহার করে, যেমন জনসংখ্যা, শিল্প এবং ভোক্তা পরিসংখ্যান, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স পরিকল্পনা এবং লেনদেন প্রক্রিয়া জাতকরণ।
মিনি কম্পিউটার
যে কম্পিউটার টার্মিনাল লাগিয়ে প্রায় এক সাথে অর্ধ শতাধিক ব্যবহারকারী ব্যবহার করতে পারে তাই মিনি কম্পিউটার। এটা শিল্প-বাণিজ্য ও গবেষণাগারে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- pdp-11, ibms/36, ncrs/9290,
মাইক্রো কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটারকে পার্সোনাল কম্পিউটার বা পিসি বলেও অভিহিত করা হয়।ইন্টারফেসচিপ (Mother Board), একটি মাইক্রোপ্রসেসর, সিপিইউ, র্যাম, রম, হার্ডডিস্ক ইত্যাদি সহযোগে মাইক্রো কম্পিউটার গঠিত হয়। দৈনন্দিন জীবনের সর্বক্ষেত্রে এ কম্পিউটারের ব্যবহার দেখা যায়। মাকিনটোস আইবিএম পিসি এ ধরনের কম্পিউটার।
সুপার কম্পিউটার
অত্যন্ত শক্তিশালী ও দ্রুতগতিসম্পন্ন কম্পিউটারকে সুপার কম্পিউটার বলে। এ কম্পিউটারের গতি প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১ বিলিয়ন ক্যারেক্টর। কোনো দেশের আদমশুমারির মতো বিশাল তথ্য ব্যবস্থাপনা করার মতো স্মৃতিভাণ্ডার বিশিষ্ট কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটার। CRAY 1, supers xll এ ধরনের কম্পিউটার।
ট্যাবলেট কম্পিউটার
ট্যাবলেট কম্পিউটার এক ধরনের মাইক্রো কম্পিউটার। যা পাম টপ কম্পিউটার নামে পরিচিত। এটি স্পর্শ পর্দা সংবলিত প্রযুক্তি। এটি এনড্রয়েড এবং উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে চলে।
অটোক্যাড (AutoCAD) বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত একটি নাম। ডিজাইন সফটওয়্যার (Design Software) হিসেবে এর জুড়ি মেলা ভার। যে কোন প্রকার স্কেল ড্রয়িং এর ক্ষেত্রে অটোক্যাড এর বিকল্প হয় না। বিভিন্ন জ্যামিতিক কিংবা গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেইস অটোক্যাডের অনন্য বৈশিষ্ট্য।
অন্যভাবে বলতে গেলে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং প্রোগ্রামের নাম অটোক্যাড যা অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ এবং ব্যবহার বান্ধব। সহজকরে বললে, অটোক্যাড একটি গ্রাফিক্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন সফটওয়্যার।বিভিন্ন প্রকারের লগো ডিজাইন, এমব্রয়ডারী ডিজাইন এবং গ্রীল ডিজাইন, আর্কিটেকচারাল ড্রয়িং, স্ট্রাকচারাল ড্রয়িং, মেকানিক্যাল ড্রাফটিং-এ অটোক্যাডের রয়েছে একক আধিপত্য।অটোক্যাডকে কম্পিউটারের সাহায্যে নকশা অংকন পদ্ধতি হিসেবেও ধরা হয়। ২ডি (২D)এবং ৩ডি (3D) উভয় প্রকারেই অটোক্যাড বিশেষভাবে কাজে লাগে।কিবোর্ড, মাউস এবং ড্রয়িং প্যাড ব্যবহার করে সহজেই নকশা অংকন করা যায়। অনেক টুলস বিল্টইন থাকে বলে আমরা এর সাহায্যে খুব সহজেই অংকনের কাজগুলো করতে পারি।
ইনফরমেশন সিস্টেমে ব্যাপকভাবে ক্যাড এর ব্যবহার হয়ে থাকে। পণ্যে নকশা করতে এক্ষেত্রে বিশেষ ধরনের ক্যাড সফটওয়্যারসমূহ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এগুলোর মাধ্যমে সুন্দরভাবে পণ্যের নকশা করা সম্ভবপর হয়। শুধু তাই নয় পণ্যের নকশা করার পর সেটিতে ভুল রয়েছে কিনা তা পরীক্ষার জন্য কম্পিউটারগুলোতে কম্পিউটার এইডেড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএই) পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
CAD এর পূর্ণরূপ হলো Computer Aided Designঃ অটোক্যাড (Auto CAD) হলো বিশ্বসমাদৃত একটি পাওয়ারফুল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিজাইন সফটওয়্যার। ক্যাড হল কম্পিউটারের মাধ্যমে বিভিন্ন নকশা প্রণয়ন, সম্পাদনা, বিশ্লেষণের কাজে ব্যবহৃত একক সফটওয়্যার বা সফটওয়্যারের সমষ্টি। ক্যাড সফটওয়্যারের মাধ্যমে দ্বিমাত্রিক ও ত্রিমাত্রিক উভয় প্রকার নকশাই প্রণয়ন সম্ভব।রেখা বা লাইনের সাহায্যে নকশা বা ডিজাইনের কাজ করার জন্য ব্যবহারিক প্রোগ্রাম হলো ক্যাড(CAD).CAD দ্বারা Copmuter সাহায্যে Design এবং Drafting করা হয়। এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে বাড়ির নকশা থেকে শুরু করে ব্রীজ-কালভার্টের নকশাসহ প্রকৌশল ও স্থাপত্যবিদ্যার যে কোন জটিল নকশা খুব সহজে, কম সময়ে এবং নিঁখুতভাবে তৈরি করা যায়। ক্যাডের সাহায্যে নকশা অংকনের ক্ষেত্রে মাইক্রোমিলিমিটার পর্যন্ত মাপ নিঁখুতভাবে করা যায়, , ফলে মেকানিক্যাল ড্রাফটিং এর নিঁখুত পরিমাপ সমৃদ্ধ জটিল ড্রয়িং এর ক্ষেত্রে এটি এনেছে আমুল পরিবর্তন যা হাতে অংকনের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। মাইক্রোকম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য অটোক্যাড (Auto- CAD), ফাস্টক্যাড (FastCAD), টার্বোক্যাড (Turbo CAD), মেগাক্যাড (Mega CAD) ইত্যাদি ব্যবহারিক প্রোগ্রাম আছে তারমধ্যে অটোক্যাড সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
এটির মাধ্যমে টু-ডি ও থ্রি-ডি উভয় ধরনের অবজেক্ট তৈরি করা যায়। তবে টু-ডি অবজেক্ট তৈরি করে পরবর্তীতে একে থ্রিডি তে রূপান্তরিত করা যায়। অটোক্যাড এ তৈরিকৃত ডিজাইনকে থ্রিডিতে রূপান্তর করার 3D Studio Max, Maya ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের থ্রিডি প্রোগ্রাম ব্যবহার করা হয়। আবার অটোক্যাড এ সরাসরি থ্রিডি ডিজাইন তৈরি করা যায়। AutoCAD এ থ্রিডি অপেক্ষা টু-ডিতে কাজ করা সহজ। অটোক্যাড এ আমরা যা কিছুই ড্রইং বা ডিজাইন করি না কেন এর ইন্টারফেস সর্ম্পকে ধারণা অর্জন করা প্রয়োজন। অটোক্যাড এর বিভিন্ন প্যাকেজ বর্তমানে বাজারে আছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজ ও সুবিধাজনক প্যাকেজ হলো AutoCAD 2007 .
ক্যাড-ক্যাম প্রযুক্তি হলো ম্যানুফ্যাকচারিং অটোমেশনের নামে বহু দশকের অবদানের সমাপ্তি। এটি উদ্ভাবক, গণিতবিদ এবং যন্ত্রবিদগণের ভিশন। এটি ভবিষ্যতে রূপদানের জন্য এবং প্রযুক্তির সাহায্যে উৎপাদন কার্য চালনার জন্য ব্যবহৃত একটি সফটওয়্যার।
‘’ক্যাড-ক্যাম" শব্দটি সাধারণত সিএনসি মেশিন (CNC Machine) এর সাহায্যে নকশা ও যন্ত্রচালনা বা উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত একটি সফটওয়্যার। মডেল তৈরির জন্য জ্যামিতিক আকার ব্যবহার করে ডিজাইন এবং অঙ্কন করে দ্রব্য তৈরি করতে ক্যাড-ক্যাম সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। ক্যাড-ক্যাম (CAD-CAM) হচ্ছে কম্পিউটার এইডেড ডিজাইন এবং কম্পিউটার এইডেড ম্যানুফ্যাকচারিং এর সংক্ষিপ্ত রুপ ।
1. AutoCAD
2. FreeCAD
3. Creo CAD
4. TinkerCAD
5. IronCAD
6. LibreCAD
7. CATIA
8. SOLIDWORKS
9. Autodesx Inventor
10. 3d studio Max (3DS Max )
11. Draft Sight
12. Fusion 360
13. Open SCAD
14. SketchUp
15. Onshape
16. Teamcenter
17. PTC creo,
18. Maya
এছাড়াও আরো অনেক ক্যাড সফ্টওয়্যার রয়েছে।
ক্যাড প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে বর্তমানে ইঞ্জিনিয়ারিং ড্রয়িং এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। ড্রয়িং এবং ডিজাইনের ক্ষেত্রে একদিকে যেমন সময়ের সাশ্রয় হয়েছে অন্যদিকে এসব ক্ষেত্রে নির্ভুল নির্ভরতা ও গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে ক্যাড সফটওয়্যারের পাশাপাশি আরও একটি সফটওয়্যার অত্যন্ত জনপ্রিয় তা হল ক্যাম সফটওয়্যার। ক্যাম(CAM)- কম্পিউটার এইডেড ম্যানুফ্যাকচারিং। ক্যাড/ক্যাম এর সংমিশ্রণ এই দুটিক্ষেত্রেই শক্তিশালী কম্পিউটারের প্রয়োজন। ক্যাড সফটওয়্যারটি ডিজাইনার এবং ড্রাফটসম্যানদের সহায়তা করে আর ক্যাম উৎপাদন প্রক্রিয়াজনিত ব্যয় হ্রাস করে।
ক্যাড সফটওয়্যার ব্যবহারের সুবিধা: নিচে ক্যাড সফটওয়্যার ব্যবহারের সুবিধা সমুহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হল-
১। ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোডাকটিভিটির বৃদ্ধি ঘটায়
২। লীড সময় হ্রাস করে।
৩। ডিজাইনের নির্ভুলতা বৃদ্ধি করে।
৪। ডিজাইন অধিক স্ট্যান্ডার্ড হয়।
৫। পরিমাপে সঠিকতা বৃদ্ধি পায়।
৬। ডিজাইন ড্রাফটিং এবং ডকুমেনটশন পদ্ধতির প্রমিতকরণ।
এ ছাড়াও অটোক্যাড সফটওয়্যার ইনটেরিয়র ডিজাইনার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, প্রোসেস ড্রাফটার, সিভিল ইঞ্জিনিয়াররা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করে থাকে। আবার ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে ও অনেকেই এই সফটওয়্যারের ব্যবহার করে থাকেন।
অটোক্যাড সফটওয়্যারটি ব্যবহারকারীর অত্যন্ত বন্ধুত্বসুলভ সফটওয়্যার এবং এটি সবার জনপ্রিয় প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ C+ দিয়ে তৈরি। যার সহায়তায় ডিজাইনার ও ইঞ্জিনিয়াররা সহজেই দ্বি-মাত্রিক (2D) এবং ত্রি- মাত্রিক (3D) ডিজাইন তৈরি করতে পারে এবং যে কোনো যন্ত্রের স্থানান্তরযোগ্য পার্টস ডিজাইন করতে পারে। বর্তমানে স্থাপত্য প্রকৌশল শিল্প ও ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ এর ক্ষেত্রে অটোক্যাড গুরুত্বপূর্ন স্থান করে নিয়েছে। যারা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যারিয়ার শুরু করছেন বা করবেন অথবা আগে থেকেই এই ক্ষেত্রে আছেন তাদের ইন্জিনিয়ার হিসেবে নিজস্ব কাজের ক্ষেত্রে অবস্থান দৃঢ় করার জন্য অটোক্যাড এর পরিপূর্ন ব্যবহার জানা অবশ্যই জরুরী।
অটোক্যাড ব্যবহারের সুবিধাসমূহ নিম্নে বিষদ ভাবে আলোচনা করা হল-
ডিজাইন করা
ইন্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে যে কোনো প্রকার ডিজাইন করা বা প্রটোটাইপিং একটি সময় সাপেক্ষ ও কঠিন বিষয়। অন্যদিকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্ষেত্রে বিভিন্ন পার্টসের সমন্বয়ে একটি যন্ত্র তৈরি করতে হয় সেজন্য কাগজে ডিজাইন অনেকটাই জটিল।
অটোক্যাডের সাহায্যে সহজেই ডিজাইনের জটিল বিষয়গুলো পরীক্ষা করে দেখা যায় 2D ও 3D ব্যবহার করে যার, ফলে সত্যিকারের স্থাপনা তৈরির আগেই এর পরিপূর্ন ডিজাইন তৈরি করে নেওয়া যায় এবং ডিজাইনের পরিমাপও ঠিক পাওয়া যায়। অটোক্যাড ব্যবহার করে সহজেই ডিজাইনের ভুল বের করা যায়।
অর্থের সাশ্রয়
ইন্জিনিয়ারিং কাজের ক্ষেত্রে ডিজাইন সহ বিভীন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বাস্তবে অনেক ব্যয়বহুল সত্যিকারের স্থাপনা বা যন্ত্রপাতির ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। যা অটোক্যাড ব্যবহার করে নিমিষেই সমাধান করা সম্ভব এর ফলে সহজেই একজন ডিজাইনার তার ডিজাইনের বিভিন্ন অংশ পরিবর্তন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পরেন। এতে যেমন তার ডিজাইনের নতুনত্ব আসে তেমনি অর্থেরও সাশ্রয় হয়।
সময়ের অপচয়
কম বাস্তবে সত্যিকার নমুনা বা প্রটোটাইপ তৈরি করতে অনেক সময়ের প্রয়োজন কিন্তু অটোক্যাড ব্যবহার করে অতি অল্প সময়েই যে কোনো কিছুরই নমুনা ডিজাইন তৈরি করে ফেলা যায় এবং ডিজাইনটির বিভিন্ন প্রয়োজনীয় দিক পরিবর্তন খুব সহজেই ও দ্রুততার সাথে করে ফেলা যায়। যা ডিজাইনারদের অনেক মূল্যবান সময় বাঁচাতে সাহায্য করে।
কমিউনিকেশন ও একত্রীকরণ
ডিজিটাল ফরম্যাট এ ডিজাইনকৃত মডেল সংরক্ষন করে একাধিক ইঞ্জিনিয়ার একটি ডিজাইন এর ওপর কাজ করে ডিজাইনটিকে পরিপূর্ন করতে পারে এবং অন্য যে কোনো ব্যক্তির কাছেও সহজেই তা পাঠাতে পারে। বিশ্বায়নের এই যুগে অটোক্যাড এর মাধ্যমে একজন ডিজাইনার সহজেই অন্য ডিজাইনারের সাথে তার ডিজাইনটির বিভিন্ন অংশ নিয়ে আলোচনা করতে পারে এবং বিভিন্ন ধারনার সমন্বয়ে একটি পরিপূর্ন ডিজাইন তৈরি করা অনেক সহজ হয়।
নিজেদের সুবিধার জন্যই ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনারদের অটোক্যাড শেখা উচিৎ। আমাদের দেশে কাজের পাশাপাশি অটোক্যাডের মাধ্যমে বহির্বিশ্বেও ইঞ্জিনিয়ার ও ডিজাইনারদের কাজের অনেক সুযোগ রয়েছে।